দেশের জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে বয়সসীমা। যেকোনো বয়সিরাই কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। কিন্তু সরকারের এ মহতি উদ্যোগেও দেখা যাচ্ছে বাস্তব চিত্র উল্টো।
এবার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে গত বছরের চেয়ে কম আবেদন পড়েছে বলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড ভেঙে চালু করা হয়েছে ইলেকট্রো মেডিকেল এবং এনভায়রনমেন্ট ট্রেড। তিনটি ট্রেডেই একই বিষয় পড়ানো হয়। কিন্তু চাকরির সার্কুলারে চাওয়া হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা। ফলে ইলেকট্রো মেডিকেল এবং এনভায়রনমেন্ট ট্রেড- এ দুই বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা নিয়োগবঞ্চিত হচ্ছে। থাকছে বেকার। এসব দেখেই অনেকে এ শিক্ষায় আসছে না বলেই অভিমত অভিজ্ঞমহলের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, সারা বিশ্বেই কারিগরি শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের বয়সের কোনো বিধিনিষেধ নেই। সেই ধারণা থেকে এবার এ নিয়ম চালু করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ বা ভর্তি বৃদ্ধি করা। এ বছর বিষয়টি তেমন জানাজানি হয়নি। আগামী দিনে হয়তো শিক্ষার্থী বাড়বে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ছয় শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক সরকারি পলিটেকনিক এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানে আসন আছে প্রায় ৫৫ হাজার। গত বছর পাঁচ হাজার আসন শূন্য ছিল। শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং বিদেশ ফেরত দক্ষ শ্রমিকদের ডিপ্লোমা সনদে ভূষিত করতে সরকার এ বছর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে বয়সের বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে। নতুন নিয়মে যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবে। গত বছর পর্যন্ত দুই বছর আগে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর আগে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা বেসরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারত।
গত ৯ আগস্ট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির আবেদন নেয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম জানান, প্রথম ধাপে দুই শিফট (প্রভাতি এবং বৈকালিক) মিলিয়ে এক লাখ ৪৩ হাজার আবেদন পড়েছে। কেউ কেউ উভয় শিফটে আবেদন করেছে। এতে মোট আবেদনকারী পাওয়া গেছে প্রায় ৮৮ হাজার। দ্বিতীয় ধাপে আরো প্রায় দুই হাজার আবেদন পড়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে যেসব আবেদনকারী অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন, যেসব আবেদনকারী বিভিন্ন নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে নিশ্চায়ন সম্পন্ন করেছেন, তাদের মাইগ্রেশন এবং যারা তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন করবেন তাদের সকলের ফলাফল একই সঙ্গে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে ।
কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে বয়সের বাধা তুলে দেওয়ার পরেও শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কম কেন জানতে গতকাল বিকালে বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসেন মোল্লাকে ফোন করলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি ভর্তি শেষে যোগাযোগ করতে বলেন।
উল্লেখ্য, ভর্তিতে বয়সের বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় কারিগরি শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, নীতিমালা তৈরির আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আসন শূন্য থাকার বিষয়টি আমলে নিয়ে এবং বিদেশ ফেরতদের সনদায়নে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাস্তবে বিষয়টি যথাযথ হয়নি। কেননা আসন শূন্য থাকার বেশকিছু কারণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে- ইলেকট্রো মেডিকেল, এনভায়রনমেন্ট, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য আইপিসিটি, মাইনিং, টেক্সটাইল, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আসন শূন্য থাকছে। এছাড়া মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয়ও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
বয়স বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে আন্দোলনরত বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যেসব বিভাগের চাহিদা আছে সেগুলোর কোনোটিতে পদ শূন্য থাকছে না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভেঙে ইলেকট্রো মেডিকেল এবং এনভায়রনমেন্ট করা হয়েছে। একই জিনিস পড়ানো হয়, কিন্তু চাকরির সার্কুলারে চাওয়া হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা। ফলে উল্লিখিত দুই বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা নিয়োগবঞ্চিত হচ্ছে। থাকছে বেকার। এসব দেখেই অনেকে এ শিক্ষায় আসছে না। ফলে পদ শূন্য থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ৪৫টি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়। ডিগ্রি দেওয়া হলেও চাকরির বাজারে পদ সৃষ্টি করা হয়নি। যেমন- হাসপাতালে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলো মেরামত করবেন ইলেকট্রো মেডিকেল বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা। কিন্তু কোনো হাসপাতালে এ পদ সৃষ্টি হয়নি। ফলে একদিকে ডিগ্রিধারীদের চাকরি হচ্ছে না, আরেকদিকে যন্ত্র নষ্ট হলে পড়ে থাকে।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষায় জড়িতদের দাবি ছিল, সর্বোচ্চ পাঁচ বছর আগে এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এতে একই ক্লাসরুমে কাছাকাছি বয়সের শিক্ষার্থীরা বসবে। বয়স্করা ক্লাসরুমে যুক্ত হলে কম বয়সিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। কিন্তু এ দাবি আমলে নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বয়সের বাধা তুলে দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি।
নাম প্রকাশ না করে কারিগরি বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম ধাপে ৮৮ হাজার আবেদন পড়েছে, তাদের মধ্যে ‘বেশি বয়সের’ শিক্ষার্থী আছে মাত্র ৯৮০ জন। এরা ২০১৫ বা এর আগে এসএসসি উত্তীর্ণ। একজন পাওয়া গেছে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এ শিক্ষার্থী ফরিদপুরের এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আবেদন করেছেন। তার বয়স ৪২ বছর। প্রথম ধাপের আবেদনের পর দেখা গেছে- খুলনা, রাজশাহী এবং ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনেক আসন খালি আছে। আসনের তুলনায় আবেদনকারী কম হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষায় সরকারের বিনিয়োগ বাড়ছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বাড়াতে পারছে না সরকার। অন্যদিকে এর আগে স্টেপ নামে একটি প্রকল্প থেকে হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে উন্নয়নের জন্য ৯ কোটি টাকা করে অনুদান দিয়েছিল সরকার। এছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এসব কাজে এসেছে কিনা, সেটি মূল্যায়ন হয়নি। এছাড়া প্রকল্পটিতে উত্থাপিত দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত কমিটির কাজও শেষ হয়নি।
সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জয়সাওয়াল বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক নয়। আমাদের দুদেশের সম্পর্ক
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পুষ্টি সেবা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত