admin

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২০

৩১ ঘণ্টা পর নগরীতে বিদ্যুতের আলো

৩১ ঘণ্টা পর নগরীতে বিদ্যুতের আলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপর্যস্ত সিলেট মহানগরীর জনজীবনে অবশেষে জ্বলে উঠতে শুরু করেছে ‘বিদ্যুতের আলো’। অন্ধকারে নিমজ্জিত ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে এখনো অক্লান্ত পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের ৪ শতাধিক কর্মী। তাদের নির্ঘুম চেষ্টায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে সিলেট। ৩১ ঘণ্টা পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। তীব্র পানি সংকটে নাকাল নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন দাবি করেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি।
গত মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিলেটের আখালিয়ার কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লাগার পর থেকে সিলেটজুড়ে নেমে আসে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পর বেলা পৌনে একটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগে প্রায় ৩১ ঘণ্টা। গতকাল বুধবার প্রথমে নগরীর আম্বরখানা ও টিলাগড় এলাকায় বিদ্যুৎ এলেও সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে নগরীর জিন্দাবাজারসহ আশপাশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় সুনামগঞ্জে।
প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন জানান, সন্ধ্যা ৫টা ৫৪ মিনিটের দিকে প্রথমে আম্বরখানা ও টিলাগড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পরে জিন্দাবাজারসহ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দ্রুততম সময়ে বাকি সকল এলাকাগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও ওই এলাকার ফিডারগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে এগুলো সচল করা হয়েছে।
খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন দাবি করেন, মঙ্গলবার রাত থেকে প্রায় ৪০০ কর্মী কাজ করছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে মেরামত করা কিছু ফিডার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। যত দ্রুত সম্ভব বাকি এলাকাগুলো বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নগরীর এক চতুর্থাংশ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। বাকি এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, টানা ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরে পানি সরবরাহ করতে পারেনি। আর তাতে যত সময় পার হয়েছে বেড়েছে ভোগান্তি। নগরীর বাসা-বাড়িতে দেখা দেয় পানির তীব্র সংকট। প্রয়োজন মেটাতে লোকজন বালতি, ড্রাম, কলসি কাঁকে ছুটে চলেন পানির সন্ধানে। যেখানে টিউবওয়েল আছে; সেখানেই ভিড় করছেন মানুষ।
গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি সংকটে ভোগান্তির চিত্র। এ সংকট মেটাতে শিশু, কিশোর বৃদ্ধ, নারী থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ অন্যত্র ছুটছেন পানির জন্য। বিশেষ করে পাড়ার ভিতরে যেসব বাসায় জেনারেটর আছে ; সে বাসায় পানির জন্য অনেককে ভিড় করতে দেখা যায়। আবার পাড়ার ভিতরে কোথাও টিউবওয়েল থাকলে মিলেছে কিছুটা স্বস্তি। বাদ পড়েনি পুকুরও। অন্যদিকে, নগরীর সুরমার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের পানির জন্য অন্যতম অবলম্বন ছিলো সুরমা নদী। অনেকে ভ্যানগাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন ঘরে।
নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা রিতা সিনহা জানান, কমলগঞ্জ থেকে বিয়ে হয়ে স্বামীর বাড়িতে এসেছেন প্রায় এক দশক। এই সময়ের মধ্যে পানির জন্য এমন হাহাকার দেখেননি তিনি। পরে স্বামীকে দিয়ে সুরমা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করিয়ে চালিয়েছেন দৈনন্দিন কার্যক্রম।
কেবল মাছিমপুর নয়, কালীঘাট, কুশিঘাট থেকে সুরমার দুই তীরের বাসিন্দাদের অনেকেই সুরমা নদীর পানি ব্যবহার করেন।
এদিকে, পানির এ সংকটকে কাজে লাগিয়ে কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ নেমেছিলেন উপার্জনে। বাসায় বাসায় পানি পৌঁছে দিয়ে করছেন অর্থ উপার্জন। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ড্রাম পানি ১০ টাকা করে হলেও এখন সংকটের এ সময়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন বাসায় বাসায়।
নগরীর চৌকিদেখি এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনি প্লাস্টিকে ১০/১৫ লিটারের ৫টি ড্রাম পানির দাম হাঁকেন ৩শ’ টাকা। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেশি দামে ক্রয় করেন পানি।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ‘পানি বিতরণ ব্যবস্থা পুরোটাই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিককালে নগরীতে এ রকম বিপর্যয় দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্য সময় আধাবেলা পানি না থাকলে নগরীতে হাহাকার শুরু হয়ে যায়। কিন্তু, এবার দেড় দিন বিদ্যুৎ না থাকার পরও সে রকম হাহাকার হচ্ছে না। তবে, ভিতরে ভিতরে সংকট আছে। লোকজন প্রতিবেশী, ট্যাংকির রিজার্ভার কিংবা বিকল্প কোন উপায়ে পানি সংগ্রহ করছেন। পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে তারা সচেষ্ট রয়েছেন বলে জানান তিনি। অপরদিকে, বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে চরম দুরাবস্থার মধ্যে সময় পার করতে হয় চিকিৎসাধীন রোগী ও তাঁদের স্বজনদের। বিশেষ করে সিলেট এম এজি ওসমানী হাসপাতালের রোগীরা ছিলেন চরম বিপাকে। এছাড়া, নগরীর অধিকাংশ বিপণি বিতান ও দোকানপাট অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো। পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়।
নগরীর সুবিদবাজার বন কলাপাড়ার বাসিন্দা, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার থেকে তার বাসায় পানির সংকট। বুধবার বাসায় হাত-মুখ ধোয়ারও পানি ছিল না। ফ্রিজের জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। মোবাইলও চার্জ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
সিটি সেন্টারের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিলো কম। জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা পরিচালনাও ছিলো অনেক ব্যয় বহুল। এছাড়া একনাগাড়ে জেনারেটর চালিয়ে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সেবা দিতে হিমশিম খায়। মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্কও ছিলো দুর্বল। আবার অনেকেই মোবাইলে চার্জ না থাকায় ছিলেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
মোমবাতির দাম দ্বিগুণ
সিলেটে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর মোমবাতির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সিএনজি অটোরিক্সা চালক আবুল মিয়া জানান, গতকাল বুধবার তিনি একটি মোমবাতি ১০ টাকায় কিনেছেন। এর আগে এ ধরনের একটি মোমবাতি তিনি ৫ টাকায় কিনতেন।
নগরীর বন্দরবাজারের মুদি দোকানী আলী হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ নির্ভর নগরজীবনে এতদিন মোমবাতির কদর বোঝা যায়নি। কিন্তু, মঙ্গলবার থেকে মোমবাতির কদর বোঝা যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় মোমবাতির দাম বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১ টার দিকে আগুন লাগার পর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে সিলেট নগরীসহ বিভাগের বেশ কয়েকটি অঞ্চল। এর পর প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় ।

Sharing is caring!


আর্কাইভ

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ সংবাদ

নবীন-প্রবীণ সবার সমন্বয়ে দেশটাকে সুন্দর করাই বিএনপি লক্ষ্য: খন্দকার মুক্তাদির

নবীন-প্রবীণ সবার সমন্বয়ে দেশটাকে সুন্দর করাই বিএনপি লক্ষ্য: খন্দকার মুক্তাদির

বিএনপির চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ যেনো আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর হয়। আজকে যাদের বয়স খুব কম,

ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’

অনলাইন ডেস্ক বৃটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ নিউজ ম্যাগাজিন চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার

শিক্ষাঙ্গন থেকেই শুরু হোক আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাণের পথচলা : কাইয়ুম চৌধুরী

শিক্ষাঙ্গন থেকেই শুরু হোক আদর্শ রাষ্ট্র নির্মাণের পথচলা : কাইয়ুম চৌধুরী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিন্ডিকেট সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, “অতীতের মতো এবারও

অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে বিএনপি : খন্দকার মুক্তাদির

অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে বিএনপি : খন্দকার মুক্তাদির

৩১ দফা বাস্তবায়িত হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ আসতে পারবে না বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১

বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, সাম্য ও উন্নয়নের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, সাম্য ও উন্নয়নের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেছেন, ৪০ বছর ধরে মৌসুমী ক্লাব মানবিক কাজের মাধ্যমে

বিয়ানীবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের মানববন্ধন সম্পন্ন

বিয়ানীবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের মানববন্ধন সম্পন্ন

নব উদ্যোগে-জাগ্রত হোক ঐক্যের ডাক”-এ শ্লোগান-কে সামনে রেখে” সিলেটের বিয়ানীবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ” এর উদ্যোগে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করা ও

সিলেটে সিভিল সার্জনে এর উদ্যোগে বিশ্ব টিকাদান দিবস পালিত

সিলেটে সিভিল সার্জনে এর উদ্যোগে বিশ্ব টিকাদান দিবস পালিত

সিলেটের সময় :: টিকাদান কর্মস‚চির ম‚ল লক্ষ্য হলো রোগপ্রতিরোধের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি সুস্বাস্থ্যে বলীয়ান বাংলাদেশ গঠন করা। আমরা সবাই