editor

প্রকাশিত: ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ঐতিহাসিক রায়

নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ঐতিহাসিক রায়

ডেস্ক রিপোর্ট:-

সংবিধানে বর্ণিত নাগরিক অধিকার সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। এ রায় অধিকার বঞ্চিত মানুষদের মহৎ অনুপ্রেরণা যোগাবে। এ রায় জনগণের ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি উজ্জ্বল কীর্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

আনুষ্ঠানিক লিখিত চাহিদা ছাড়া এবং গ্রাহককে না জানিয়ে সরকারি-বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটরের কাছ থেকে কল লিস্ট কল রেকর্ড (কথোপকথন) সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত রায়ে বলেছেন, অডিও ভিডিও সহ নাগরিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ প্রায়ই ফাঁস হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়, যা এখনকার সাধারণ অভিজ্ঞতা। এটা কোন আগ্রহী গোষ্ঠীর জন্য সহজে লঙ্ঘন করা যাবে না। অথচ এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনিয়তা ও অন্যান্য যোগাযোগের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।( মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে ৪৪ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয়েছে,যা মূলত সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে)

রায়ে বলা হয়েছে গ্রাহককে জানিয়ে কেবল ফোন কোম্পানিগুলো কললিস্ট বা তথ্য সরবরাহে বাধ্য থাকিবে। তা না হলে সরবরাহ করা তথ্য উপাত্ত সাক্ষ্যমূল্য হারাবে এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষ নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী থাকবেন। এ নির্দেশনা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ পালন করতে বাধ্য।

বাংলাদেশের সংবিধান ব্যক্তিগত গোপনতা সুরক্ষা দিলেও অতীতে আমরা দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর টেলিফোনিক কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। দুই নেত্রীর কথোপকথন প্রকাশ একদিকে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে অন্যদিকে সম্মানিত নেত্রীদ্বয়ের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কোন প্রতিকার করা হয়নি। বর্তমানে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যক্তিগত কথোপকথন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। এই রায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশে লাগাম দিতে পারবে।

সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের ধারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের (ক) প্রবেশ, তল্লাশী ও আটক হইতে স্বীয় গৃহে নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকিবে; এবং (খ) চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।

নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে এ রায় যুগান্তকারী রায়। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্য কোন আইন সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারবে না। সরকারের বিভাগ সমূহের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের সংবিধানে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব নিশ্চয়তা দেওয়ার ফলে আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের কাজের বৈধতা যাচাইয়ের কর্তৃত্ব বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত করে। কেউ যেন সাংবিধানিক সীমানাকে লংঘন করতে না পারে তার জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বিচার বিভাগকে।

সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ প্রসঙ্গে কতিপয় আদেশ ও নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিচার বিভাগ সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বকে দুইটি পদ্ধতিতে নিশ্চিত করে। (১) বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে (By judicial Enforcement) এবং (২) বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে (By judicial Review)
সংবিধানের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতকরণ নির্ভর করে একটি দেশের আদালতের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতার উপর।

যখন শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগ মৌলিক অধিকার লংঘন করে তখন আদালত যে ক্ষমতা বলে মৌলিক অধিকারকে বলবৎ করে তাকে বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা বলে। আর শাসন বিভাগ বা আইন বিভাগ যখন সংবিধানের সীমালংঘন করে বা আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে কোন কাজ করে তখন যে ক্ষমতা বলে আদালত উক্ত কাজকে অসাংবিধানিক বা অবৈধ ঘোষণা করে তাকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলে।

আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন সংসদ প্রণয়ন করতে পারবে না তা ২৬ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করেছে এবং সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জাতীয় সংসদকে দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমাদের সংসদকে সংবিধানের অধীন করা হয়েছে, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারবে।
সংবিধান পরিপন্থী কোন আইন জাতীয় সংসদে গৃহীত হলেও সংবিধানের ৭,২৬ ও ১০২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে আদালত অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সুতরাং উচ্চতর আদালত সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

যখন কতিপয় মানবাধিকারকে দেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা (constitutional guarantees) দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাদেরকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। এই সংবিধানিক নিশ্চয়তা বিচার বিভাগের মাধ্যমে কার্যকর হয়। মৌলিক অধিকার গুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে উচ্চতর মর্যাদা দেওয়া হয় এইজন্য যে যাতে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারে ,যখন তখন ছিনিয়ে নিতে না পারে।

মানুষের আত্মবিকাশের জন্য কতিপয় সুযোগ-সুবিধাই হচ্ছে মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে তো ৪৪ পর্যন্ত ১৮ টি অধিকার সন্নিবেশ করা হয়েছে।
কিছু মৌলিক অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না আর কিছু মৌলিক অধিকারের উপর যুক্তিসংগত বাধানিষেধ আরোপ করা যায়। জনস্বার্থে, জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা স্বার্থে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা স্বার্থে আরোপিত বাধা নিষেধ যুক্তিসংগত কিনা এবং তা জনস্বার্থে করা হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আদালতের।

মৌলিক অধিকার বলবৎ করার প্রশ্নে সুপ্রীম কোর্টের বাইরে অন্য আদালতকেও ক্ষমতা প্রয়োগ করার নির্দেশনা রয়েছে। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের (২) বলা হয়েছে এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য সকল বা যেকোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কোন সংসদ জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার প্রশ্নে অন্য কোন আদালতকে এরূপ এখতিয়ার প্রদানে কোন আইন প্রণয়ন করেনি বা প্রয়োজনও মনে করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্র ক্রমাগত অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করছে। জনগণের ভোটের অধিকার মৌলিক অধিকার বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বাঙালির চিরকালীন মূল্যবোধও আমরা পরিত্যাগ করে ফেলেছি। অন্যায়, নৃশংসতা ও বর্বরোচিত সংস্কৃতি আমাদের রক্তের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এসব বিষয়ে আমরা উদাসীন। আমাদের অনেকের এখন সীমাহীন ক্ষমতা। এই বাস্তবতায় জনগণের স্বপক্ষে একটি যুগান্তরকারী রায় মানুষকে আশাবাদী করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচার নিশ্চিত করার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করবে।

Sharing is caring!


সর্বশেষ সংবাদ

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হবে : খন্দকার মুক্তাদির

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হবে : খন্দকার মুক্তাদির

সিলেট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত সিলেট নগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘সিলেট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত’ উল্লেখ করে বিএনপির

রাজনগর থানা পুলিশের অভিযানে ২৩১ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ১

রাজনগর থানা পুলিশের অভিযানে ২৩১ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ১

কুলাউড়া প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের রাজনগর থানা পুলিশের অভিযানে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা ২৩১.৫ বস্তা চিনি সহ একজনকে আটক করা হয়েছে।

নগরী ৩৫ ও ৩২ নং ওযার্ডের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে নগর বিএনপির সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী

নগরী ৩৫ ও ৩২ নং ওযার্ডের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে নগর বিএনপির সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, আবহমান কাল থেকে

শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ দুর্গা পুজার মহা সপ্তমাদি উদযাপন

শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ দুর্গা পুজার মহা সপ্তমাদি উদযাপন

শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ সিলেটে আজ বৃহস্পতিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় সার্বজনীন শারদীয় দুর্গা পুজার মহা সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পুজা, অঞ্জলি

‘ড. ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি’

‘ড. ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি’

অনলাইন ডেস্ক ‘রিসেট বাটন’ চাপার বিষয়টি অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুনভাবে শুরুর কথা বুঝিয়েছেন, ইতিহাস মুছে

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর বিএনপির শুভেচ্ছা

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর বিএনপির শুভেচ্ছা

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী

টানা চার দিনের ছুটি শুরু

টানা চার দিনের ছুটি শুরু

অনলাইন ডেস্ক আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে টানা চার দিনের ছুটি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার (১৩ অক্টোবর) পর্যন্ত ছুটি

র‌্যাব’র অভিযানে শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের ৩ জন আটক

র‌্যাব’র অভিযানে শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের ৩ জন আটক

সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‌্যাব-৯। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর