editor
প্রকাশিত: ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৪ সাল। মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরেক বছর। সিলেটবাসীর জন্যও একটি আলোচিত বছর। ঘটনাবহুল বছর। এই বছরে উত্তাল ছিল সিলেট। নানা ঘটন-অঘটনে ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হতে হয়েছে সিলেটবাসীকেও। বজ্রপাত-কয়েক দফা বন্যা ও কয়েকটি আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হলেও শেষ ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে নজিরবিহীন ঘটনার মধ্য দিয়ে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড়যুগের শাসনামলের অবসান ও শেখ হাসিনার পলায়ন ছিল বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। রাজপথে বাঁচা-মরার লড়াই। দিনটি ছিল ৪ঠা আগস্ট। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উত্তাল রাজপথ। মানুষ বাড়ছে। পিছু হটছে পুলিশ। কোনোভাবেই কিছু হচ্ছে না। ঘোষণা দিয়ে সকালে কোর্ট পয়েন্টে অবস্থান নেন বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা। রাজপথ দখলে রাখবেই- এমন পণ তাদের। এই অবস্থায় সকালেই অ্যাকশনে নামে পুলিশ। মুর্হুমুর্হু গুলি। টিয়ারশেলের গন্ধ। টিকে থাকাই দায়। কোর্ট পয়েন্ট তখন রণক্ষেত্র। সংঘর্ষ চলছে। পুলিশের গুলির মুখে বেশিক্ষণ টিকলেন না নেতাকর্মীরা। পিছু হটলেও রাজপথের অবস্থান ছাড়েননি। কেউ জিন্দাবাজার, কেউ কেউ বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান নেন।
মাঝপথে শিশু মুনতাহা হত্যায় কেঁদেছিল সিলেট। তবে নির্মম হত্যাকাণ্ডকেও ছাড়িয়ে যায় কোম্পানীগঞ্জে মুঠোফোনে চার্জ দেওয়া নিয়ে তিন গ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। আবেগতাড়িত করে সিলেটের গোয়াইনঘাটে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে যুবক হেলাল মিয়ার মৃত্যুও। পীড়া দিয়েছে সীমান্তে ভারতীয়দের হাতে একের পর এক বাংলাদেশী হত্যা। এসব কিছুর পরও প্রয়াত বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ তার জন্মমাটিতে দাফন করতে পেরে সিলেটবাসীর দুঃখ কিছুটা ঘুচেছিল। তবে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর না ফেরার আক্ষেপ থেকেই গেছে। সবকিছুর পরও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সিলেট। ২০২৫ সাল যেন শান্তি ও সমৃদ্ধির হয় এই প্রত্যাশা সকলের। এক ঝলকে দেখে নেই ২০২৪ সালে সিলেটে ঘটে যাওয়া আলোচিত যত ঘটনার এক সালতামামী।
ঘোষণা দিয়ে সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে নামেন আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। হাতে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। কারও হাত খালি নেই। ন্যূনতম পক্ষে একটি বাঁশও রয়েছে। খালি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মী নেই বললেই চলে। নেতারা এলেন। বক্তৃতা করলেন। রাজপথে আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকেই থাকতে হবে না। এমন ঘোষণায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নগরে।
শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ওইদিন সিলেটের রাজপথে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেক অস্ত্রই ছিল অচেনা। ভারী অস্ত্র বলা চলে। একে ফোরটি সেভেনের মতো অস্ত্র ছিল বলে জানিয়েছিলেন তারা। এত অস্ত্র দেখে বিরোধী মতের নেতাকর্মী তো দূরের কথা সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীরাও পিছু হটেন। মধুবনের ছাদ কিংবা বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থান ছিল নেতাকর্মীদের। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন ফটো সাংবাদিকরা। আগ্নেয়াস্ত্রের প্রদর্শন হলেও তারা প্রকাশ্যে ছবি তুলতে পারছিলেন না।
এক নলা, দু’নলা বন্দুক তো ছিলই তার পাশাপাশি পিস্তল, কাটা রাইফেল, রিভলবার হাতে হাতে ছিল। কয়েকটি একে ফোরটি সেভেনের মতো অস্ত্র ছিল। লন্ডনের এক নেতার হাতে সবচেয়ে আধুনিক মারণাস্ত্র। অস্ত্রসহ ক্যাডাররা মাঠে নামার পর পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। ফলে সম্মুখযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় অস্ত্রবাজ ক্যাডাররা। এ দৃশ্যে গোটা নগরেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তখন দুপুর। বিএনপিসহ ছাত্র-জনতার বড় অংশের অবস্থান ছিল বন্দরবাজার এলাকা। আরেকটি বড় অংশ ছিল জিন্দাবাজারে। এই অবস্থায় অস্ত্রবাজ ক্যাডাররা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মাঠে নামে। বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার দু’জায়গায়ই নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চারদিক। দোকানপাট বন্ধ। সড়কে যানবাহনও নেই। মাঠে কেবল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও পিছু হটছিল না বিরোধী নেতারা। নগরের জিন্দাবাজার। বিরোধী দলের কর্মীদের সংখ্যা হবে কয়েকশ’। সশস্ত্র অস্ত্রবাজরা প্রথমে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর গুলি ছুড়ে। গুলিতে মাটিতে লুটে পড়েন অনেকেই। রক্তাক্ত হতে দেখা যায়। উদ্ধার করে করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। চলে লড়াই। এমন দৃশ্য বন্দরবাজার এলাকারও। সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে বাসাবাড়িতে থাকা মানুষজনও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এ ঘটনার পর অস্ত্রবাজদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছিল। গণমাধ্যমেও প্রচার হয়। কিন্তু এখনো অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা অস্ত্রবাজদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান : ঘটনাবহুল এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জুলাই-আগস্ট আন্দোলন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যেতে হয়েছিল শেখ হাসিনা। যার প্রভাব শুধু সিলেট নয়, সারাদেশে। জুলাই মাসজুড়ে আর আগস্টের প্রথমাংশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল ও স্লোগানে মুখর ছিল সিলেটের রাজপথ।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে ১৯ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ছোঁড়া নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান সাংবাদিক এটিএম আবু তুরাব। এছাড়াও পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেনের। এছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষে সিলেট বিভাগে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন।
তিন দফা বন্যা : চব্বিশের তিন দফা ভয়াবহ বন্যায় পর্যুদস্ত ছিল সিলেট। ভয়াবহ এই বন্যায় সিলেট নগরসহ কয়েকটি উপজেলাকে তছনছ করে দেয়। কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ২৮ মে থেকে ভারি বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই পরে ১৬ জুন আবার বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতি ভারি বর্ষণে মহানগর এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায়। ১৩ দিন যেতে না যেতেই ১ জুলাই ফের তৃতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয় সিলেট। তিন দফার বন্যায় সিলেট বিভাগের অন্তত অন্তত ১৬ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকেন দিনের পর দিন। সীমান্তে হত্যা: বছরজুড়ে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয়দের গুলিতে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে প্রতিহিংসামূলক হত্যাও। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিলো গত ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর টানা দুইদিন সিলেটের দুই সীমান্তে খাসিয়াদের গুলিতে দুই বাংলাদেশি হত্যা।
২৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটের দমদমীয়া সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সবুজ মিয়া (২২) নামের এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হন। সীমান্তের ১২৬১ পিলার এলাকায় ভারতের ভূখন্ডে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পাহাড় তলী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। এর আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর মো. মারুফ মিয়ার (১৬) মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ঝিংগাবাড়ি গ্রামের মো. শাহাবুদ্দীনের ছেলে।
বছরের গোড়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মাসুমের (১৫) গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয় সীমান্ত থেকে। ২৩ আগস্ট একই সীমান্ত দিয়ে গিয়ে আব্দুল কাদির (৪০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি সোনাতনপুঞ্জি গ্রামে নির্মিত সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসরত আইয়ুব আলীর ছেলে। মুনতাহা হত্যায় কাঁদল দেশ : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ছয় বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের অপহরণ ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা পুরো দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলো, কাঁদিয়েছিলো দেশবাসীকে।
৩ নভেম্বর বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা। নিখোঁজের আট দিন পর ১০ নভেম্বর মুনতাহার লাশ বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত কর্দমাক্ত ডোবায় পুঁতে রাখা অবস্থা থেকে অন্যত্র সরানোর সময় প্রতিবেশী এক নারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে জনতা। মুনতাহার মরদেহ উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে উদঘাটন হয় হত্যা রহস্য, পুলিশ অপহরণকারী ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে।
সীমান্ত দিয়ে পালানোর হিড়িক : ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের দেশত্যাগের হিড়িক পড়ে। সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনেকে পালিয়ে যান প্রতিবেশি ভারতে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে কানাইঘাটের দনা ও সোনাতনপুঞ্জি সীমান্ত বেছে নেন। স্থানীয় কিছু দালাল এই সুযোগে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেককে ওপারে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় তারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে।
সীমান্তে আটক বিচারপতি মানিক : বহুল আলোচিত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের আটক হওয়ার ঘটনাটিও ছিলো বহুল আলোচিত। ২৩ আগস্ট কানাইঘাট সীমান্তে আটক হওয়ার খবরটি সেদিন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’ ছিলো। তিনি সীমান্ত দিয়ে পালাতে গিয়ে প্রতারিত হন, তাকে মারধর করে তার সর্বস্ব লুটে নেয় দালালেরা। পরে বিজিবি তাকে আটক করে। তার আটকের আগের ও পরের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িযে পড়ে।
বিচারপতি মানিককে আদালতে হাজির করার সময়ও ঘটে নজিরবিহীন ঘটনা। আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হন তিনি। অভিযোগ উঠে কারাফটকেও হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। হামলায় তার অণ্ডকোষ ফেটে গেছে দীর্ঘদিন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি।
জন্মমাটিতে হারিছ চৌধুরীর পুনর্দাফন: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপি নেতা মো. আবুল হারিছ চৌধুরীর লাশ ১৬ অক্টোবর তারিখে সাভারের একটি কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। তিন বছর আগে হারিছ চৌধুরী মারা যান প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে। এই সময় তাঁকে ভিন্ন নামে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্ত করে তাঁকে স্বনামে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কানাইঘাটের মাটিতে পূণরায় দাফন করার জন্য হাইকোর্টে রিট মামলা করেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিচয় শনাক্ত হলে হাইকোর্ট ৪ ডিসেম্বর এক রায়ে হারিছ চৌধুরীকে কানাইঘাটে শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানা প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পূণরায় দাফনের জন্য আদেশ দেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ সিলেট নিয়ে আসা হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় শাহী ঈদগাহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা অর্পণ শেষে কানাইঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দাফন ও যথাযথ গার্ড-অব-অনার শেষে তার মরদেহ পুনরায় দাফন করা হয়।
আ.লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে কুপিয়ে মুক্তিপণ আদায় : ১২ ডিসেম্বর রাতের আধারে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের উপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন মধ্যরাতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে নগরীর সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসায় যাওয়ার পথে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা মিসবাহ সিরাজকে গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে অপহরণ কর নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তিপণের টাকা মধ্যস্ততাকারীর হাতে তুলে দেওয়ার পর মিসবাহ সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় নগরীর সাগরদিঘীর পাড় এলাকায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা।
কোম্পানীগঞ্জে তিনগ্রামের সংঘর্ষ : মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে তিন দল গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ৭০ জন। ১৪ ডিসেম্বর রাত ও ১৫ ডিসেম্বর সকালে এ সংঘর্ষ ঘটে।
শনিবার রাতে কোম্পানীগঞ্জে একটি দোকানে মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই জনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষ চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এসময় আহত হন অন্তত ৫০ জন। রাতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন রোববার সকালে আবারও মাইকে ঘোষণা করে কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর, বর্ণি ও কাঁঠালবাড়ী গ্রামের লোকজন একে অপরকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেয়। একই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সংষর্ষে লিপ্ত হয় উভয় পক্ষ। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ড : বিদায়ী বছর সিলেটে আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন মৃত্যু আলোচনার ঝড় তোলে। ২২ এপ্রিল কানাইঘাট উপজেলার হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামে মসজিদের সীমানার জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে আপন ভাই নিহত হন ভাতিজাদের হাতে। আপনজন ও স্বজনদের হারিয়ে দুশ্চিন্তায় একই পরিবারের রুমানা নামের এক পুত্রবধূ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৬ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান গুরুতর আহত আরেক ভাই।
নভেম্বর মাসে ২২ দিনের ব্যবধানে সীমান্তবর্তী কানাইঘাটে পাঁচটি খুন ও কয়েকটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত মুনতাহা অপহরণ ও খুনের ঘটনায় কাঁদিয়েছে পুরো দেশের মানুষকে। ১৮ নভেম্বর বিকালে কানাইঘাট বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও পৌরসভার ধনপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মুমিন (২৮)। পূর্ব বিরোধের জের ধরে ঘাতক রাজু ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুমিনের তলপেটে আঘাত করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
বছরের শুরুতে ২৬ জানুয়ারি কানাইঘাটে মধ্যুযগীয় কায়দায় এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উপজেলার রতনপুর গ্রামে গরু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে নজরুল ইসলামের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় প্রতিবেশী মাহমুদ ও তার পরিবারের লোকজন। ৩১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নজরুল। ঘটনাটি সর্বমহলে নিন্দার ঝড় তুলে।
২৪ ডিসেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে যুবক হেলাল মিয়ার মৃত্যু হয়। তাকে চুন ও বালু মিশ্রিত পানি পানে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। তিনি ঘোষ গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে ঘোষ গ্রামের ২ যুবককে পাশের রাধানগর গ্রামে কয়েকজন আটক করে। পরে চোর সন্দেহে আটককৃত ওই দুজনকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে হেলালকে জোর করে চুন ও বালি মিশ্রিত প্রায় ১ লিটার পানি খাওয়ানো হয়। পরদিন হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় হেলালের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, সিলেটের রাজপথে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা সিলেটের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। সিলেট হচ্ছে সম্প্রতির শহর। এই শহরে রাজনৈতিক সম্প্রতি দেশের মধ্যে অনন্য। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি ছুড়ার ঘটনা সিলেটের সম্প্রীতিতে আঘাত করেছে। এতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, পুণ্যভূমি সিলেটে অতীতে এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। এত অস্ত্রও দেখেনি সিলেটবাসী। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তারাই গুলি ছুড়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। এর বিচার দেশের মানুষ করেছে, আরও করবে, ইনশাল্লাহ।
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের বার্ষিক স্পোর্টস ও কালচারাল উইক-২০২৫ উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজের
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাট এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বুধবার
সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচন-২০২৫ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর মেন্দিবাগস্থ সমিতির কার্যলয়ে
সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জরুরী কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। নগরের ১০ এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধের
সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানে আরও সাত তরুণ-তরুণী আটক হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে অসামাজিক কাজের দায়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করেছেন সদ্য শপথ নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৯০
নিউজ ডেস্ক:: জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহায়তা করবে। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার-প্রসার ও মানবজাতির কল্যাণকামী দেব-মানব পূজ্য আর্য্যশ্রাবক সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০৬ তম জন্মবার্ষিকীর পুণ্যস্মৃতি স্মরণে সিলেটে