নিজস্ব প্রতিবেদক
গেল বছর বিজয়ের মাসে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি হাতে পেয়েছিলো এক হাজার ৬ জন শিক্ষার্থী। বছর ঘুরে আবারও বিজয়ের মাস। দীর্ঘ এক বছর পর আজ ছিলো মূল্যায়নের দিন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠে শ্রেষ্ঠ পাঠক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে তারা ১১ জন। মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর স্মরণে ১১ জনকে পুরস্কৃত করা হলেও আলাদা ভাবে এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও পেল পুরস্কার। সব মিলে মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর হাতে উঠল পুরস্কার। আর এর মধ্যদিয়ে সমাপ্তি হলো ইনোভেটর আয়োজিত বইপড়া উৎসবের ১৩তম আসর।
ইনোভেটর আয়োজিত ‘জেলা পরিষদ, সিলেট’ বইপড়া উৎসবের সমাপনী আসর শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে সূচিত এ অনুষ্ঠানটি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। ২০১৯ সালের বিজয়ের মাসে শুরু হওয়া এ উৎসবের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে। আর সমাপনী হওয়ার কথা ছিলো স্বাধীনতার মাস মার্চে। কিন্তু অদৃশ্য শত্রু করোনা মহামারীর কারণে থমকে দাঁড়ায় সমাপনী এ কার্যক্রম। তাই দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অনুষ্ঠিত হলো বইপড়ার সমাপনী অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে জেলা পরিষদ মিলনায়তনের প্রবেশ মুখে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আগন্তকদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়। এমনকি নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখেই সকলকে আসন গ্রহণ করানো হয়। সেই সাথে মাস্কের শতভাগ ব্যবহারও নিশ্চিত করা হয়।
ইনোভেটর এর মুখ্য সঞ্চালক ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি জাতীয় বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কবি কামাল চৌধুরী।
এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, এবং জেলা পরিষদ, সিলেট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনোভেটর এর নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, প্রতীক এন্দ টনি এবং ইনোভেটর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম অনি।
ইনোভেটর সদস্য ঈশিতা ঘোষ চৌধুরী এবং সৈয়দা আছিয়া খাতুন এর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ড. কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে বই। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আর্দশকে হৃদয়ে লালন করতে হলে তাঁর মহাজীবন পাঠের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন – সংগ্রামকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ইনোভেটর এর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠোৎসবের আয়োজন এক যুগান্তকারী ঘটনা।
কামাল চৌধুরী বলেন, পঠন-পাঠন ছাড়া তারুণ্যের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানার কোনো বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শেখ মুজিব আর বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। মুজিব জীবনের নিবিড় পাঠ ছাড়া তাঁকে ভালোবাসা যায় না। তিনি বলেন, মুজিবের রচনাগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। তরুণদের সেই মুজিব জীবন সমুদ্রকে সততা, নিষ্ঠা এবং অধ্যবসায়ের সাথে জানতে হবে। সেজন্য পড়াশোনার, গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার তাঁর বক্তব্যে মুজিব বর্ষে সিলেট জেলা পরিষদ এর সহযোগিতায় ইনোভেটরের বইপড়ার আয়োজনকে ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতির পিতাকে অধ্যয়ন ছাড়া কোনো শিক্ষা পূর্ণতা পায় না।
তিনি বলেন, সবাইকে মুজিব আদর্শ চর্চা করতে হবে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে।
আলোচনা শেষে এ বছরের বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ পর্ব সঞ্চালন করেন ইনোভেটর এর প্রধান সমন্বয়কারী প্রভাষক সুমন রায়। এসময় স্কুল পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঠক গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঞ্চিতা দাশ আঁখি, সেরা পাঠক সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুলতানা জামান ছাজিম, ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মুসতারি আহমেদ ইফতি, হযরত শাহজালাল ডি ওয়াই কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মানসুরা সিদ্দিকা, দি এইডেড হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আহবাবুর রহমান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঠক স্কলার্স হোম, শাহী ঈদগাহর শিক্ষার্থী তাসফিয়া চৌধুরী, সেরা পাঠক মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেটের শিক্ষার্থী দেবাঞ্জন দেব রাতুল ও প্রীতিরাজ বণিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌসুমি রানী রায়, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার অর্ণা, বি এ এফ শাহীন কলেজ, শমসেরনগর এর শিক্ষার্থী হাদী হোসেন মাহীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
এ ছাড়া এ গ্রীন ডিজেবল ফাউন্ডেশন এর শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফেরদৌসী চাঁদনীকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে ক্রেস্ট, সনদপত্র, মেডেল এবং বই প্রদান করা হয়।
এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণ পর্ব সমন্বয় করেন ইনোভেটর এর সমন্বয়ক সুমিতা দাশ, সদস্য প্লপা চৌধুরী, নিহাম মতিন, বদরুল ইসলাম শাকির প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ইনোভেটর ২০০৬ সাল থেকে তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রত্যয়ে বইপড়া উৎসবের আয়োজন করে আসছে।